সমান (Flat) এবং ভেতরের দিকে ঢুকানো (Inverted) নিপল থাকলে কিভাবে বাচ্চাকে বুকের দুধ খাওয়াবেন

Spread the love

ফ্ল্যাট এবং ইনভার্টেড নিপল কি?

আশেপাশের যায়গা (এরিওলা) থেকে যদি নিপলটা উঁচু না হয় কিংবা উত্তেজনা বা স্টিমুলেশনের  সময়েও যদি বাইরের দিকে প্রসারিত না হয়, সে নিপলকে সমান বা ফ্ল্যাট নিপল বলা হয়।

উত্তেজনার সময়ে বা স্টিমুলেশনের পরও নিপল যদি সামনের দিকে প্রসারিত না হয়ে ভেতরে ঢুকে যায়, তাকে ইনভার্টেড কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকানো নিপল বলা হয়। ইনভার্টেড নিপল দেখতে বেশ সমান, অনেকটা গালের টোলের মত অথবা মাঝখানটা কিছুটা আঁকাবাকা থাকবে। প্রায় ১০% নারীদের নিপল ইনভার্টেড কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকানো থাকে।

বিজ্ঞাপণ

সমান কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকানো নিপলের সাহায্যে শিশুকে ঠিকভাবে বুকের দুধ খাওয়ানো বেশ কঠিন হয়ে পড়ে।  নিচের লিস্টের মাধ্যমে বুঝতে পারবেন আপনার নিপল সমান কিংবা উল্টানো কি না।

নিপল এরকম থাকলে ঠিকঠাক প্রসারিত হয়। ছবিঃ Babycenter
নিপল এরকম থাকলে তাকে ফ্ল্যাট বা সমান বলা যায়ছবিঃ Babycenter
‘পিঞ্চ টেস্ট’র মাধ্যমে সহজেই বুঝতে পারবেন আপনার নিপল উল্টোনো বা ইনভার্টেড কি না। আপনার বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী দিয়ে ছবির মতো করে নিপলের চারপাশে ১ ইঞ্চি যায়গা রেখে আলতোভাবে ধরে চাপ দিন। স্বাভাবিক হলে আপনাআপনি নিপল কিছুটা বাইরের দিকে প্রসারিত হবে। ছবিঃ Babycenter
ইনভার্টেড নিপলের ক্ষেত্রে আলতোভাবে চাপ দিলে নিপল কিছুটা ভেতরে ঢুকে যাবে। ছবিঃ Babycenter

সমান কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকানো নিপলের সাহায্যে কি আমি আমার শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবো?

খুব সম্ভবত, হ্যা! কিন্তু সেক্ষেত্রে খাটা খাটুনি কিছুটা বেশী হতে পারে তবে সেটা নির্ভর করে আপনার নিপল কতটা ভেতরে ঢুকানো এবং আপনার শিশু কতটা ভালোভাবে দুধ টেনে খেতে পারবে সেটার উপর।

কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে, মায়ের নিপল যদি সমান কিংবা কিছুটা ভেতরের দিকে হয়, সেক্ষেত্রেও চুষে খেতে তেমন কোন সমস্যাই হয় না। তবে অনেক দুর্বল শিশু, বিশেষত প্রিম্যাচিওর শিশুদের ক্ষেত্রে চুষে খেতে বেশ সমস্যা হয়।

যখন আপনার স্তনে অনেক বেশী পরিমাণ দুধ জমা হয়ে থাকে (engorged) এবং সেই সাথে আপনার নিপল যদি উল্টানো থাকে, তখন আপনার শিশুকে সঠিকভাবে দুধ পান করানো বেশ কঠিন হয়ে পড়বে।

অনেক সময় ব্রেস্ট টিস্যু ডেলিভারির সময়ে  দেয়া আইভি ফ্লুইডের (স্যালাইন) কারণে ফুলে থাকে, যার কারণে নিপল তেমন একটা প্রসারিত হয়না । তবে শরীর থেকে আইভি ফ্লুইড বেরিয়ে গেলে (সাধারণত দুই সপ্তাহের মত সময় লাগে) স্তন আবার আগের মতোই হয়ে যাবে। এমন অবস্থায়, স্তনে পাম্প করে দুধ বের করা যায় অথবা ল্যাক্টেশন কনসালটেন্টের পরামর্শ নেওয়া যায়। ডাক্তার আপনাকে শেখাবেন কিভাবে ‘রিভার্স প্রেশার সফটেনিং’ পদ্ধতিতে শিশুকে সঠিক উপায়ে দুধ পান করানো যায়।

কিভাবে ফ্ল্যাট এবং ইনভার্টেড নিপলের সাহায্যে শিশুকে দুধ পান করানো যায়?

নিশ্চিত হোন, আপনার শিশু গভীরভাবে স্তন মুখে নিতে পারছে কিনা

আপনার শিশু নিজে নিজে যথেষ্ট বড় করে হা করতে ও মুখ বন্ধ করতে পারছে কিনা খেয়াল করুন যাতে করে সে নিপল ও তার আশপাশ (এরিওলা) পুরোটা গভীর ভাবে মুখে নিতে পারে৷ শিশু যদি শুধুমাত্র কেবল নিপলেই কামড়ে ধরে থাকে, সেক্ষেত্রে সে তো পর্যাপ্ত দুধ পাবেই না, এর সাথে নিপলে ব্যাথার পাশাপাশি ক্ষতিও হতে পারে।

শিশুকে সঠিক উপায়ে দুধ পান করানোর জন্যে, প্রথমে বুড়ো আঙুল স্তনের উপরে রাখতে হবে এবং বাকি চার আঙুল দিয়ে স্তনের নিচে ধরতে হবে। আলতো করে নিজের দিকে চাপ দিয়ে নিপলটা বের করতে হবে এবং শিশুর ঠোঁটে এবং থুতনিতে আলতো করে নিপল দিয়ে ঘসে দিলে স্বাভাবিকভাবেই সে তা মুখে নেবে।

শিশু যখন কিছুটা বড় করে হা করবে, শিশুকে নিজের দিকে টেনে জড়িয়ে ধরুন। এমনকভাবে ধরুন যাতে নিপলটা তার মুখের ভেতরের উপরিভাগে থাকে। শিশুর মুখ ঠিকঠাক বসে গেলে, আপনাআপনিই শিশু খেতে পারবে।

ঘন ঘন বুকের দুধ খাওয়ান

আপনার ডেলিভারির পর শিশুকে যত তারাতাড়ি কাছে পাবেন, তাকে বুকের দুধ পান করান এবং এর পর থেকে একটু পর পর বার বার করে খাওয়ান। এতে করে আপনার স্তন নরম থাকতে থাকতে শিশুর খাওয়ার অভ্যাসটা হয়ে যাবে। শিশু যখন নিয়মিত দুধ পান করতে পারবে, সে ধীরে ধীরে স্তনের সাথে পরিচিত হয়ে যাবে এবং তার খাওয়াও সহজ হয়ে যাবে।

কিছুদিনের মধ্যে যখন বুকে দুধ আসতে শুরু করবে তখন স্তন আগের তুলনায় শক্ত হতে থাকবে। এসময় শিশু আগে থেকে অভ্যস্ত না থাকলে ফ্ল্যাট বা ইনভার্টেড নিপলে খেতে তার কষ্ট হবে।

ব্রেস্ট পাম্প ব্যবহার করুন

শিশুকে খাওয়ানোর কিছু সময় পূর্বে, আপনার স্তন কিছুটা পাম্প করে নিন (ম্যানুয়াল হ্যান্ড পাম্পই চলবে)। স্তন যদি একদম পরিপূর্ণ থাকে, তখন পাম্প করলে এর কারণে নিপল কিছুটা নরম হয়ে যাবে এবং শিশুর জন্যে নিপলটা টেনে বের করা এবং সঠিকভাবে মুখ বসানো সহজ হয়ে যাবে।

শিশু যাতে ঠিকঠাক নিপলটা মুখে নিতে পারে এবং পর্যাপ্ত পরিমাণ খাওয়াটা চলমান রাখতে পারে, সেজন্যে দুইবার বুকের দুধ খাওয়ানোর মধ্যবর্তী সময়ে নিয়মিত পাম্প করতে পারেন।

আপনার যতদিন ভালো লাগবে এবং পদ্ধতিটি কাজ করবে, ততদিনই নিপলটি সামনের দিকে প্রসারিত করার কাজে ব্রেস্ট পাম্প ব্যাবহার করতে পারেন। এছাড়াও, ব্রেস্ট টিস্যুর জমাট বেঁধে থাকাটা, যার কারণে মূলত ইনভার্টেড নিপল হয়ে থাকে,সেটা ঠিক করতেও ব্রেস্ট পাম্প বেশ কাজে দেয়।

নিপল এভার্টার (nipple everter) ব্যবহার করুন

নিপল উল্টানো কিংবা সমান থাকলে, তা সাময়িকভাবে ঠিক করার জন্যে এভার্টার এমন একটি ছোট্ট ডিভাইস, যেখানে একটি ফ্লাঞ্জের সাথে একটা রাবারের বাল্ব লাগানো থাকে। শিশুকে খাওয়ানোর আগে, ফাঞ্জটা নিপলের উপর রাখুন এবং বাল্বে চাপ দিতে থাকুন। ধীরে ধীরে নিপলটা বেরিয়ে আসবে।

বিজ্ঞাপণ
নিপল এভার্টার

ব্রেস্ট শেল (breast shell) ব্যবহার করুন

ব্রেস্ট শেল প্লাস্টিকের তৈরী দুইটি অংশবিশিষ্ট একটি ডিভাইস যার একটি অংশে গোল কাটা থাকে যেখানে নিপলটা ঠিকঠাক এটে যায়। ব্রেস্ট শেল স্তনে ঠিকঠাক বসিয়ে দেওয়ার পর, নিপলের চারপাশে হালকা চাপ লাগতে থাকে যার ফলে ধীরে ধীরে নিপল বেরিয়ে আসে ।

শিশুকে দুধ পান করানোর জন্যে নিপলকে প্রস্তুত করতে শিশু গর্ভে থাকা অবস্থাতেই এটি ব্যাবহার শুরু করতে পারেন। (আপনার প্রিম্যাচ্যুর বাচ্চা হওয়ার সম্ভাবনা থাকলে, সেক্ষেত্রে শিশু জন্ম নেওয়ার আগে এটি ব্যবহার করবেন না কারণ এর থেকে জরায়ুর সংকোচন ঘটতে পারে)

শিশুকে দুধ পান করানোর প্রায় আধা ঘন্টা থেকে এক ঘন্টা আগে এটা পড়ে থাকলে নিপল অনেকটাই বেরিয়ে আসে। অনেক নারীরা একবার শিশুকে খাইয়ে পরের বার খাওয়ানোর আগ পর্যন্তও পড়ে থাকেন, দিনে এক ঘন্টা থেকে ৮ ঘন্টাও পড়ে থাকা যায় এই শেল। তবে রাতে ঘুমাতে গেলে এটা না পড়া উচিত না, কারণ তাতে দাগ হয়ে যেতে পারে।

কিছু কিছু নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান এমন ব্রেস্ট শেল বানিয়ে থাকে যেখানে সামনের চেম্বারে যে দুধটুকু জমা হয়, সেগুলো ব্যাকটেরিয়াজনিত দূষণমুক্ত এবং শিশুকে খাওয়ানো যায়। আবার কিছু প্রতিষ্ঠান এমন শেল বানায়, যেগুলোতে জমা হওয়া দুধ শিশুকে খাওয়ানো যায় না। তাই ব্যাবহারের পূর্বে অবশ্যই প্যাকেটের সাথে দেওয়া ইউজার ম্যানুয়াল পড়ে দেখুন এবং প্রত্যেকবার ব্যাবহার শেষে ম্যানুয়ালে উল্লেখ করা পদ্ধতিতে ধুয়ে রাখুন।

নিপল শিল্ড (nipple shield) ব্যবহার করুন

নিপল শিল্ড ছোট ছিদ্রবিশিষ্ট সিলিকনের তৈরি এক ডিভাইস যা সরাসরি নিপলের উপর বসিয়ে দেওয়া হয় এবং যার ছোট ছিদ্রটি দিয়ে শিশু সহজেই দুধ পান করতে পারে। নিপল শিল্ড ব্যাবহারের আগে আপনার ডাক্তারের সাথে কথা বলে নিন, তিনিই আপনাকে শেখাবেন কিভাবে নিরাপদ ও সঠিক উপায়ে ডিভাইসটি ব্যাবহার করতে হবে।

যেসব নারীদের ইনভার্টেড নিপল আছে, তাদের অনেকেই এই শিল্ড ব্যবহারে বেশ ভালো ফলাফল পেয়েছেন, তবে কিছু কিছু শিশুর ক্ষেত্রে এই শিল্ড ঠিকঠাক কাজ করে না। আর তাইতো, শিশুর প্রয়োজনের চেয়ে কম দুধ পাওয়া, দুধ জমে যাওয়া, স্তনে ব্যাথা এমনকি শিশুর ওজন কমে যাওয়াসহ বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।

নিপল শিল্ড

অনেক নারীরা আবার কোন ডিভাইসে না যেয়ে ম্যানুয়ালি হাতের সাহায্যই নিপল বের করতে সক্ষম হন:

নিপলকে উত্তেজিত করে

শিশুকে খাওয়ানোর কিছু সময় পূর্বে, বুড়ো আঙুল এবং তর্জনী দিয়ে আলতো করে নিপলটি ধরে ঘুরিয়ে উত্তেজিত করার চেষ্টা করুন। এবার ঠান্ডা ভেজা কাপড় দিয়ে নিপলটি স্পর্শ করুন। তবে বরফশীতল কাপড় হলে, স্তনের উপর বেশীক্ষণ রাখাবেন না। এই প্রক্রিয়াটি উল্টানো নিপলের চেয়ে ‘ফ্ল্যাট’ বা সমান নিপলের ক্ষেত্রে বেশ ভাল কাজ করে।

রিভার্স প্রেশার সফটেনিং

শিশুকে দুধ পান করানোর অল্প সময় আগে, আপনার হাতের আঙুলগুলো নিপলের চারপাশের যায়গায় এনে গোল করে স্পর্শ করুন। এবার স্তনের ভেতরের দিকে আলতো করে চাপ দিন। একটানা চাপ দিয়ে রাখুন, একবারে প্রায় ১ মিনিটের মত চাপ দিন, তারপর ছেড়ে দিন। তারপর আবার করুন যতক্ষণ না পর্যন্ত নিপলটি ঠিকঠাকভাবে বেরিয়ে আসে।

আমার একটি নিপল স্বাভাবিক কিন্তু অপর নিপলটি উল্টানো। আমি কি শিশুকে এক পাশ দিয়েই খাওয়াতে পারবো?

হ্যা। শিশুর প্রয়োজনীয় পুরো দুধটুকু সে একটি স্তন থেকেই পেয়ে যাবে৷

বিজ্ঞাপণ

তবে আপনি যদি অপর স্তন দিয়েও শিশুকে খাওয়াতে চান, সেক্ষেত্রে নিয়মিত পাম্প করার মাধ্যমে ব্রেস্ট টিস্যুর জমাট হয়ে থাকাটা ভেঙে দিতে পারেন।

এই সমস্যায় কখন ডাক্তারের শরণাপন্ন হব?

সমান কিংবা ভেতরের দিকে ঢুকানো নিপল দিয়ে কিভাবে খাওয়াবেন সেটা নিয়ে চিন্তিত থাকলে কিংবা শিশুকে দুধ পান করানো নিয়ে যে কোন সমস্যার মুখোমুখি হলেই আপনি ডাক্তারের শরণাপন্ন হতে পারেন।

নিপলে কখনো কখনো বেশ ব্যাথা হতে পারে, সবসময় চাপ দিয়ে বের করায় নিপলে মাঝে মাঝে ক্ষত হয়ে যেতে পারে, খাওয়ানোর শেষে নিপল আবার ভেতরে ঢুকে গেলে তাতে দুধ জমে ক্ষত হতে পারে।

একজন পুষ্টিবিদ আপনাকে এসব সমস্যা উত্তোরণে এবং কিভাবে আপনি সবচেয়ে ভালোভাবে শিশুকে দুধ পান করাতে পারেন, সে ব্যাপারে উপদেশ দেবেন। এছাড়াও আপনার শিশু ঠিকঠাক দুধ পাচ্ছে কিনা, সে ব্যাপারেও আপনাকে নিশ্চিত করবে কিন্তু ডাক্তারই।

সবার জন্য শুভকামনা।


Spread the love

Related posts

Leave a Comment